ডিজিটাল পৃথিবীতে ইন্টারনেটের অসম বিস্তার | Starlink | Elon Musk

ডিজিটাল পৃথিবীতে ইন্টারনেটের অসম বিস্তার | Starlink | Elon Musk 

ইন্টারনেট আজকের বিশ্বে মৌলিক প্রয়োজন। কিন্তু UN-এর তথ্যমতে, ৩৭% মানুষ এখনও অফলাইন! শহরকেন্দ্রিক ফাইবার ক্যাবল বা টাওয়ারের সুবিধা গ্রামীণ ও দুর্গম এলাকায় পৌঁছায় না। এই সমস্যার সমাধান নিয়ে ইলন মাস্কের SpaceX চালু করেছে স্টারলিংক (Starlink) একটি স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা, যা মহাকাশ থেকে সরাসরি আপনার বাড়িতে ব্রডব্যান্ড পৌঁছে দেবে।

ডিজিটাল পৃথিবীতে ইন্টারনেটের অসম বিস্তার

Starlink | স্টারলিংক কী?

স্টারলিংক হলো লো আর্থ অরবিট (LEO)-এ অবস্থিত স্যাটেলাইট গুলোর একটি নেটওয়ার্ক, যা পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে হাই স্পিড ইন্টারনেট সরবরাহ করে।

  • উদ্দেশ্য: বিশ্বজুড়ে, বিশেষত প্রত্যন্ত অঞ্চলে সাশ্রয়ী ও দ্রুত ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে দেওয়া।
  • পরিকল্পনা: ২০২৩ সাল নাগাদ ১২,০০০ স্যাটেলাইট স্থাপনের লক্ষ্য! ইতোমধ্যে ৪,৫০০+ স্যাটেলাইট কক্ষপথে রয়েছে।
  •  মাস্কের ভিশন: শুধু মঙ্গলগ্রহ নয়, ডিজিটাল বিশ্বও!

ইলন মাস্ক শুধু টেসলা বা SpaceX – এর মার্স মিশনের জন্যই নন, স্টারলিংকের মাধ্যমে তিনি ডিজিটাল বৈষম্য দূর করতে চান।

  • আর্থিক মডেল: স্টারলিংকের আয় SpaceX-এর মহাকাশ মিশন (যেমন: Starship) ফান্ড করতে সাহায্য করবে।
  • ভবিষ্যতের পরিকল্পনা: মঙ্গলগ্রহে কলোনি স্থাপন করলে সেখানেও স্টারলিংকের নেটওয়ার্ক চালু হবে!

কিভাবে কাজ করে স্টারলিংক?

১. স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক: LEO-তে (ভূপৃষ্ঠ থেকে ৫৫০ কিমি উঁচুতে) স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে।

২. ফেজড অ্যারে অ্যান্টেনা: ব্যবহারকারীর বাড়িতে একটি ছোট ডিশ (ইউজার টার্মিনাল) স্থাপন করা হয়, যা স্যাটেলাইটের সাথে যোগাযোগ করে।

৩. লো লেটেন্সি: গতিতে ৫০-২০০ Mbps, লেটেন্সি মাত্র ২০-৪০ ms—যা গেমিং বা ভিডিও কলে পারফেক্ট!

স্টারলিংকের চ্যালেঞ্জ ও সমালোচনা

১. স্পেস ডেব্রিস: হাজারো স্যাটেলাইট মহাকাশে আবর্জনা বাড়াচ্ছে। সমাধান: স্বয়ংক্রিয় কলিশন এভয়েডেন্স সিস্টেম এবং স্যাটেলাইটগুলোর স্বল্প আয়ু (৫ বছর পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভূপৃষ্ঠে পুড়ে ধ্বংস)।

২. জ্যোতির্বিদ্যার ক্ষতি: স্যাটেলাইটের আলো টেলিস্কোপের পর্যবেক্ষণে বাধা দেয়। SpaceX এখন “ডার্কস্যাট” টেকনোলজি ব্যবহার করে, যাতে স্যাটেলাইট কম আলো প্রতিফলিত করে।

স্টারলিংকের বর্তমান অবস্থা

  • ব্যবহারকারী: ১৫ লক্ষ+ গ্রাহক (২০২৩ সাল পর্যন্ত), যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও কিছু এশীয় দেশে সেবা চালু।
  • বাংলাদেশে স্টারলিংক: এখনও অনুমোদনের অপেক্ষায়, তবে ভারতে ইতোমধ্যে ট্রায়াল শুরু হয়েছে।
  • খরচ: ইউজার কিট (ডিশ) ~ ৫৯৯,মাসিকচার্জ  ৫৯৯,মাসিকচার্জ ১২০ (দেশভেদে ভিন্ন)।

স্টারলিংকের সম্ভাবনা

  • ডিজিটাল বিভাজন দূরীকরণ: আফ্রিকার গ্রাম বা হিমালয়ের প্রত্যন্ত এলাকায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাবে।
  • দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা: হারিকেন বা ভূমিকম্পের পর ঐতিহ্যবাহী নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হলে স্টারলিংক যোগাযোগ রাখতে সাহায্য করবে।
  • প্রতিযোগিতা: OneWeb, Amazon-এর Project Kuiper-এর মতো প্রজেক্টের সাথে প্রতিযোগিতা হলে গ্রাহকের জন্য দাম কমতে পারে।

মাস্কের স্বপ্ন ও বিতর্ক

এলন মাস্কের মতে, “ইন্টারনেট হলো মানবাধিকার।” তবে সমালোচকরা বলেন, স্টারলিংক বেসরকারি কোম্পানির হাতে ইন্টারনেটের নিয়ন্ত্রণ দিচ্ছে। এছাড়া, উচ্চ খরচ ও পরিবেশগত প্রভাব নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

ইন্টারনেট যেখানে আকাশ ছোঁয়া

স্টারলিংক শুধু প্রযুক্তিগত মাইলফলক নয়, এটি একটি সামাজিক অভিযান। এলন মাস্কের এই উদ্যোগ সফল হলে আগামী দশকে বিশ্বের কোটি মানুষ ডিজিটাল সুবিধার আওতায় আসবে। তবে, মহাকাশের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করাই হবে আসল চ্যালেঞ্জ। স্টারলিংক কি বিশ্বকে নতুনভাবে সংযুক্ত করবে? সময়ই বলবে!

তথ্যসূত্র: SpaceX

Disclaimer

We do not guarantee that the information of this page is 100% accurate and up to date. Read More.

আমি রনি, একজন প্রযুক্তিপ্রেমী। এই ওয়েবসাইটে আমি নতুন সব গ্যাজেট, সফটওয়্যার আর অ্যাপ নিয়ে কথা বলি। আমার লক্ষ্য হলো জটিল টেকনোলজিকে সহজ ভাষায় তোমাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া, যাতে তোমরাও এই ডিজিটাল দুনিয়ার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারো।

Leave a Comment