ভাষা আন্দোলন: বাঙালির গৌরবময় আত্মত্যাগের ইতিহাস
ভাষা আন্দোলন : ২১ ফেব্রুয়ারি একটি তারিখ, যা শুধু ক্যালেন্ডারের একটি দিন নয়, বরং আমাদের জাতির আত্মপরিচয়ের প্রতীক। ১৯৫২ সালের এই দিনে ভাষার জন্য জীবন দিয়েছিলেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার ও আরও অনেকে। তাদের আত্মত্যাগ শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বেই মাতৃভাষার গুরুত্বকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আর তাই ২১ ফেব্রুয়ারি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়।
ছবি: wikipedia |
ভাষা আন্দোলনের পটভূমি
১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর পূর্ববাংলা (বর্তমান বাংলাদেশ) পাকিস্তানের অংশ হয়। কিন্তু তখনকার পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী উর্দুকে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার ষড়যন্ত্র করে। অথচ বাংলাভাষী মানুষের সংখ্যা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। ১৯৪৮ সালে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় এসে ঘোষণা করেন, “উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।” এরপর থেকেই বাঙালিরা প্রতিবাদে ফেটে পড়ে।
১৯৫২ এর ২১ ফেব্রুয়ারি
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ধর্মঘটের ডাক দেয়। কিন্তু সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে যে কোনো জমায়েত নিষিদ্ধ করে। ছাত্ররা সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মিছিল বের করলে পুলিশ গুলি চালায়। এতে শহীদ হন সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারসহ নাম না জানা অনেক তরুণ।
শহীদদের আত্মত্যাগের ফল
এই আন্দোলনের ফলে ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সরকার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। পরবর্তীতে এই ভাষা আন্দোলনের চেতনা মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রেরণা জোগায়, যার ফলশ্রুতিতে আমরা ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন করি।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
বাঙালির এই আত্মত্যাগের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে। এখন সারা বিশ্বে এই দিনটি ভাষার অধিকারের প্রতীক হিসেবে পালিত হয়।
ভাষা আন্দোলন আমাদের সংস্কৃতি, পরিচয় ও অস্তিত্বের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। শহীদদের আত্মত্যাগের মর্যাদা রাখতে হলে শুধু ২১ ফেব্রুয়ারিতে শ্রদ্ধা জানালেই চলবে না, আমাদের ভাষাকে মর্যাদা দিতে হবে প্রতিদিনের কাজে, শিক্ষায় এবং চর্চায়। মাতৃভাষাকে ভালোবাসুন, কারণ ভাষাই আমাদের পরিচয়।
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি?